সুন্দরবন সভ্যতা ও লোকসংস্কৃতি অন্বেষণ


সুন্দরবন সভ্যতা ও লোকসংস্কৃতি অন্বেষণ
লেখক : দেবব্রত নস্কর
প্রকাশক : দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা
প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০১৭ । পৃষ্ঠা : ৫০৪
মূল্য : রুপি ৬০০.০০

সুন্দরবনের মানুষ


সুন্দরবনের মানুষ
লেখক : ফখরে আলম
প্রকাশক : বিদ্যাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৬ । পৃষ্ঠাসংখ্যা : ৬৪
মূল্য : টাকা ১২০.০০

সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের জীবন, তাদের লোকসংস্কৃতি এবং লোকসাহিত্য


সুন্দরবনের মৎস্যজীবীদের জীবন, তাদের লোকসংস্কৃতি এবং লোকসাহিত্য
লেখক : ইন্দ্রাণী ঘোষাল
প্রকাশক : পুস্তক বিপণী, কলকাতা
প্রথম প্রকাশ : জুলাই ২০০৬ । পৃষ্ঠা : ১৩৬
মূল্য : রুপি ৮০.০০

সুন্দরবন : জনজীবন কাঁকড়ামারা মাছধরা আর মৌলে


সুন্দরবন : জনজীবন কাঁকড়ামারা মাছধরা আর মৌলে
লেখক : শঙ্করকুমার প্রামাণিক
প্রকাশক : গাঙচিল, কলকাতা
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১৭ । পৃষ্ঠাসংখ্যা : ২০০
মূল্য : রুপি ৩০০.০০

সুন্দরবনের পেশাজীবী সম্প্রদায়ের সমাজ ও সংস্কৃতি


সুন্দরবনের পেশাজীবী সম্প্রদায়ের সমাজ ও সংস্কৃতি
লেখক : প্রণব কুমার রায়
প্রকাশক : বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা
প্রকাশকাল : নভেম্বর ২০১৩
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ২৬৪ । মূল্য : টাকা ৪০০.০০

সুন্দরবনের বাঘ


সুন্দরবনের বাঘ
লেখক : খসরু চৌধুরী
প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল : জানুয়ারি ২০১০
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৬০ । মূল্য : টাকা ২০০.০০

সুন্দরবনের বাঘের পিছু পিছু


সুন্দরবনের বাঘের পিছু পিছু
লেখক : খসরু চৌধুরী
প্রকাশক : সময় প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি ২০১৬
পৃষ্ঠা : ৪২৮ । মূল্য : টাকা ৭০০.০০

সুন্দরবনের ইতিহাস (১ম খণ্ড)


সুন্দরবনের ইতিহাস (১ম খণ্ড) 
লেখক : কানাইলাল সরকার
প্রকাশক : পাণ্ডুলিপি, কলকাতা
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০১৭
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৪৬৪ । মূল্য : রুপি ৪০০.০০

সুন্দরবনের ইতিহাস (২য় খণ্ড)


বইয়ের নাম : সুন্দরবনের ইতিহাস (২য় খণ্ড) 
লেখক : কানাইলাল সরকার 
প্রকাশক : রূপকথা প্রকাশন, গোসাবা 
প্রকাশকাল : ২০১৫ । পৃষ্ঠা : ১৬৪ 
আকার : অক্টাভো । দাম : রুপি ৩০০.০০ 

প্রথম খণ্ডের মতো দ্বিতীয় খণ্ডও একগুচ্ছ প্রবন্ধের সমাহার। আগের খণ্ডে বিবৃত লেখক পরিচতিতে জানা গিয়েছিলো যে লেখকের বাড়ি সুন্দরবনের হাসিলকৃত এলাকা গোসাবায়, যা একদা সুন্দরবনের ভেতরেই ছিলো। এ খণ্ডে এসে আমরা জানতে পারছি যে, লেখক একটানা ২২ বছর সুন্দরবন নিয়ে কাজ করার পর এ গ্রন্থটি লেখার উৎসাহ পেয়েছেন। এ খণ্ডে মৎস্যজীবীদের জীবন-জীবিকা, গোসাবার ইতিহাস, পঞ্চায়েতের কার্যক্রম, রবীন্দ্রনাথের সুন্দরবন ভ্রমণ, সুন্দরবন ভ্রমণকাহিনী, সুন্দরবনে কাজ করেছেন এমন বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিতি ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। একটা অসাধারণ অধ্যায় হলো, সুন্দরবনের গাছপালার ঔষধি গুণ বিশ্লেষণ। জেনে রাখা ভালো, প্রথম খণ্ডের মতো এ খণ্ডও মূলত ভারতীয় সুন্দরবনের উপর আলোকপাত করেছে। পড়তে ভালোই লাগবে।

সুন্দরবন (রথীন্দ্রনাথ দে)


 বইয়ের নাম : সুন্দরবন 
লেখক : রথীন্দ্রনাথ দে 
প্রকাশক : পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ  
প্রকাশকাল : ১৯৯১ । পৃষ্ঠা : ৮৮  
আকার : অক্টাভো । দাম : রুপি ২৭.০০  

বইটি ছোট, কিন্তু সমৃদ্ধ। সুন্দরবনের ভৌগলিক বিবরণ, ইতিহাস, বিলুপ্ত প্রাণী, প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, দ্রষ্টব্য স্থান, দেবদেবী, পর্যটন, বাঘশুমারি ও বাঘের কাহিনী, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণন ও ব্যবস্থাপনা এবং গাছপালা-জীবজন্তুর তালিকা নিয়ে তৈরি হয়েছে বইটি। এ বইতে বাঘ-মানুষ সংঘাত নিয়ে লেখা হয়েছে সেই ১৯৯১ সালে যখন বিশেষজ্ঞগণ এটা নিয়ে ভাবতেনই না বললে চলে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ বরাবরই জ্ঞানের দিক দিয়ে দরকারি ও মূল্যবান বইপত্র প্রকাশ করতো। পড়া তে বটেই, এ বইটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা দরকার রেফারেন্স হিশেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।

সুন্দরবনের ইতিহাস (১ম খণ্ড)


বইয়ের নাম : সুন্দরবনের ইতিহাস (১ম খণ্ড) 
সম্পাদনা : রাজিব আহমেদ 
প্রকাশক : গতিধারা, ঢাকা 
প্রকাশকাল : ২০১২ । পৃষ্ঠা : ৬০০  
আকার : অক্টাভো । দাম : টাকা ৭৫০.০০ 

মোট বায়ান্নো জন লেখকের প্রবন্ধ স্থন পেয়েছে বইটিতে যার মধ্যে দুটো লেখা সতীশচন্দ্র মিত্রের লেখা। লেখার ধরন দেখে মনে হবে, সতীশ মিত্র বোধহয় প্রবন্ধ লিখতেন। আসলে তাঁর যশোহর খুলনার ইতিহাস বই থেকে নেয়া হয়েছে লেখা দুটো। কিন্তু কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। খসরু চৌধুরীর লেখা আছে দুটো। তেমনি করে লেখা আছে রেজা খান, ধুর্জটিপ্রসাদ নস্কর, সচীন দাস, কল্যাণ চক্রবর্তী, শরীফ খান, ইনাম-আল-হক, হুমায়ুন খান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিলু কবীর, এএফএম আব্দুল জলীল, মৃত্যুঞ্জয় রায়, ইফতেখার মাহমুদসহ অনেকেরই। বইখানাকে লেখা চুরির এক মচ্ছব বলা যেতে পারে। যাঁদের লেখা এই বইতে ছাপা হয়েছে তাঁরা কেউই জানেন না যে তাঁদের লেখা এই বইতে রয়েছে। সম্পাদক লেখাগুলো নেয়ার সময় এবং প্রকাশক ছাপাবার সময় কোনো অনুমতির ধার ধারেননি, সম্মানি তো বহুদূরের কথা। এ ধনের জোচ্চুরি এদেশে শুধু হালালই নয়, সম্পাদক ও প্রকাশক রীতিমতো সম্মান ও কৃতজ্ঞতা দাবি করে থাকেন। কোনো সভ্য দেশ হলে ওদের দুজনকেই জেলের ঘানি টানতে হতো। তবে যাঁরা সুন্দরবন সম্পর্কে জানতে বেশি বইপত্র পড়তে চান না। পত্রপত্রিকাও খুলে দেখতে চান না, তাঁদের জন্য এই বই সব লেখা এক জায়গায় এনে দিয়েছে।

সুন্দরবনের ইতিহাস (২য় খণ্ড)



বইয়ের নাম : সুন্দরবনের ইতিহাস (২য় খণ্ড) 
সম্পাদনা : রাজিব আহমেদ 
প্রকাশক : গতিধারা, ঢাকা 
প্রকাশকাল : ২০১২ । পৃষ্ঠা : ৫৮৪  
আকার : অক্টাভো । দাম : টাকা ৭৫০.০০ 

প্রথম খণ্ডের মতোই এ খণ্ডেও নানান লেখকের প্রবন্ধ একত্রিত করা হয়েছে। ৬১টি প্রবন্ধ আছে এ খণ্ডে। শিবশঙ্কর মিত্র থেকে শুরু করে এএফএম আব্দুল জলীল, রফিকুল ইসলাম খোকন, আলী কবির হায়দার, পাভেল পার্থ, শেখ গাউস মিয়া, গৌরাঙ্গ নন্দী, খসরু চৌধুরী, মোহাম্মদ তোহা খান, পূর্ণেন্দু ঘোষ, পুলক রাহা, জগন্নাথ মাইতিসহ খ্যাত-অখ্যাত প্রায় সব লেখকই স্থান পেয়েছেন। প্রয়াত আশরাফ-উল-আলম টুটু ও অ্যাডভোকেট ফিরোজ আহমেদের লেখাও রয়েছে। এ বইখানাকে প্রথম খণ্ডের মতোই চৌর্যগ্রন্থ দ্বিতীয় খণ্ড বলা যেতে পারে। এতে প্রচুর বিশেষজ্ঞ ও লেখকের লেখা আছে। কিন্তু কারো কাছ থেকেই অনুমতি নেয়া হয়নি, লেখকের সম্মানি দূরে থাক! যাঁরা অনেক অনেক বই না কিনে, অনেক অনেক বইপত্র না পড়ে সুন্দরবন সম্পর্কে বিচিত্র ধরনের লেখার স্বাদ নিতে চান, এই বইটি তাঁদের উপকার করতে পারে।

The Botany of Mangroves



বইয়ের নাম : The Botany of Mangroves  
লেখক : P.B. Tomlinson 
প্রকাশক : Cambridge University Press 
প্রকাশকাল : 1986 | পৃষ্ঠাসংখ্যা : 418  
আকার : Imperial Octavo । দাম : INR 6,711.00 

বাদাবন মানে শুধু বাঘ-হরিণ-বাঁদর-শুকর না, বাদাবন মানে একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রতিবেশ। এর গাছপালা, মাটি, পানি, বায়ুপ্রবাহের ধরন - সবকিছু আলাদা। সেভাবেই গড়ে ওঠে এখানকার গাছপালা, জীবজন্তু। এই সবকিছু মিলিয়ে যাঁরা বাদাবন বুঝতে চান, তাঁদের জন্য আঁকরগ্রন্থ The Botany of Mangroves। সারা দুনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবধি বাদাবন বোঝার জন্য সবখানেই এ বইটি জোর করেই পড়ানো হয়। বাদাবন বিষয়ক সব বিখ্যাত লেখায় এই বইয়ের সূত্র উল্লেখ থাকবেই।

Mangrove Swamps of the Sundarbans

 
বইয়ের নাম : Mangrove Swamps of the Sundarbans 
লেখক : Kumudranjan Naskar and Dwijendra Guha Bakshi 
প্রকাশক : Naya Prokash, Kolkata 
প্রকাশকাল : 1987 | পৃষ্ঠাসংখ্যা : 264  
আকার : Imperial Octavo । দাম : INR 350.00 

কুমুদরঞ্জন নস্করকে ভারতীয় সুন্দরবন তথা বাদাবন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানই বলা যায়। তিনি সারাজীবন গবেষণা করেছেন শুধু বাদাবন ও তার প্রতিবেশ নিয়ে। চন্দ্রশেখর গিরি, মার্ক স্প্যালডিং আর পিবি টমলিনসন যেমন বিশ্ব বাদাবনের গুরুর মতো, তেমনি ভারতীয় ক্ষেত্রে কুমুদরঞ্জন নস্কর। দ্বিজেন্দ্র নারায়ণ গুহ বকশীর সঙ্গে লেখা তাঁর Mangrove Swamps of the Sundarbans খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বই। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত বইটিতে সুন্দরবনের ভূমিগঠন, গাছপালার বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি, বাদাবন ব্যবস্থাপনা, সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষি ও মাৎস্য চাষ ছাড়াও সারা পৃথিবীর বাদাবন বিষয়ক একটি অধ্যায়ও আছে। বাদাবন নিয়ে যাঁদের আগ্রহ আছে তাঁদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই।

Manual of Indian Mangroves


বইয়ের নাম : Manual of Indian Mangroves 
লেখক : Kumudranjan Naskar  
প্রকাশক : Daya Publishing House, Delhi 
প্রকাশকাল : 2004 | পৃষ্ঠাসংখ্যা : 220  
আকার : Super Octavo । মূল্য : রুপি 1,950.00 

সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৪০ শতাংশ ভারতীয় অংশে পড়েছে। কিন্তু সেই ৪০ শতাংশে যেসব অসাধারণ কাজ হয়েছে, তার জন্য বাংলাদেশে বহুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, সুন্দরবন ছাড়াও উড়িষ্যা থেকে অন্ধ্র হয়ে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত ভারতের উপকূল জুড়ে বাদাবন আছে। এর মধ্যে কয়েকটি জায়গা - উড়িষ্যার ভিতরকণিকা বা কর্নাটকের উদুপু এলাকায় গেলে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। বিশেষত পার্থক্যটা গড়ে দেয় ব্যবস্থাপনা। ভারতীয় বাদাবন নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের মধ্যে কুমুদরঞ্জন নস্করকে বলা হয় প্রতিষ্ঠান। বহু বই, গবেষণা প্রবন্ধ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি, অবশ্যই সরকারি দায়িত্ব নয়। তাঁর প্রায় সব বই-ই সুপাঠ্য ও তথ্যবহুল।

ঈশানীর ভাবের সময়


 বইয়ের নাম : ঈশানীর ভাবের সময়
লেখক : খসরু চৌধুরী
প্রকাশক : সময় প্রকাশন, ঢাকা
বিষয় : উপন্যাস, সুন্দরবন
প্রকাশকাল : ২০১৭ । পৃষ্ঠা : ২৩২
আকার : অক্টাভো । টাকা ৩৫০.০০ 

“ভূখণ্ডপ্রেম, দেশপ্রেম বা জাতিপ্রেম যা-ই বলি না কেন, তা আসলে তা আত্মপ্রেমেরই অংশ। তাই তো আমাদের পাড়ার কথা, গ্রামের কথা বা নদীর কথা কোনো সাহিত্য বা ইতিহাসে দেখলে গর্ববোধ হয়, আত্মপ্রেম জেগে ওঠে। এই আত্মপ্রেম ভালো না মন্দ, ভালো হলে কোন পর্যায় পর্যন্ত ভালো, সেই প্রশ্ন আপাতত তুলে রাখছি। তবে ভূখণ্ড, দেশ বা জাতিপ্রেম যখন আত্মশ্লাঘা, আত্মগরিমা ও উচ্চমন্যতায় রূপ নেয় তখন তা সত্যিই ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়ায়। প্রেম ও গরিমার পার্থক্য বুঝে না বুঝে আমিও অনেক সময় অতিক্রম করে যাই, ওটুকুই ব্যক্তি ‘আমি’-এর নেতি। বাঙালি হিশেবে সেই ক্ষণ পৌণপুণিক আসে এমন বলার সুযোগ অবশ্য খুব কম। 

আত্মপ্রেমে গর্ব অনুভব করেছিলাম যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় বজলুল করিমের লেখা ‘ব্রজলাল কলেজের ইতিহাস’ পড়লাম। বজলুল করিম ছিলেন আমাদের কলেজের দর্শনের অধ্যাপক। সেই পরিচয়ে তিনি অবশ্য খুব কম পরিচিত। সাবেক জাতীয় ফুটবল খেলোয়াড় রুমি’র বাবা বললে প্রায় সকলেই চিনতে পারেন। তো, এর অনেক অনেকদিন পর সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোহর-খুলনার ইতিহাস’ পড়ার সময় দেখলাম খুলনা, চালনা, দাকোপ, কয়রা, নলিয়ানের নাম। গর্ব হলো যখন দেখলাম ভৈরব, রূপসা, পশর, সুতারখালী নদী ওই বইয়ের প্রধান চরিত্ররূপে উদ্ভাসিত। 

এএফএম আব্দুল জলিলের ‘সুন্দরবনের ইতিহাস’ কিন্তু ওই মাত্রায় গর্বানুভব করতে সুযোগ দেয়নি, কেননা তার অনেক তথ্যই সূত্রহীন আত্মগরিমায় ভরা। অন্য ইতিহাসবিদদের প্রতি তাচ্ছিল্য তাঁর রচনার মান নামিয়েছে অনেকখানি। সতীশচন্দ্র মিত্রের ছেলে শিবশঙ্কর মিত্রের ‘সুন্দরবনের আর্জান সর্দার’ বা ‘বনবিবি’ উপন্যাস পড়ার সময় অপ্রকাশযোগ্য নির্মলতা, ক্ষোভ আর অনুসন্ধিৎসা ভর করেছিলো সারা শরীরে। ওই উপন্যাসগুলো আজকের পশ্চিমবঙ্গবাসী বাদাবনাগ্রহীদের দুঃখই কেবল বাড়াবে। 

এরপর একদিন হাতে এলো মনোজ বসুর ‘নিশিকুটুম্ব’। করুণ ও নিষ্ঠুর জীবনের শিকার সাহেব যখন বড়ো পরবের জন্য বড়দল (উচ্চারণ বড়্দল) হাটে যায় তখন ইতিহাসের এক বিলুপ্ত গঞ্জের কথা মনে করে গর্ব হয়। কপোতাক্ষ নদের পাড়ের বড়দল এখন নিতান্ত এক হাট। একদা স্টিমার আসতো কোলকাতা থেকে, সমাগম হতো গেঁয়ো চাষা আর মহাজনের। খুলনা মহানগরীর বহু আগেই কপিলমুণি বিদ্যুতায়িত হয়েছিলো, এ তথ্য জানলে গুপ্তধন পাবার আনন্দ হয়। সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে মনোজ বসুর আরো উপন্যাস আছে, বিশেষত ‘বন কেটে বসতি’, এ সংবাদ জানলাম এই তো সেদিন। 

সেই আনন্দ, সেই গর্ব, সেই আত্মপ্রেম জেগে উঠলো যখন পড়তে শুরু করলাম শ্রদ্ধেয় খসরু চৌধুরীর ‘ঈশানীর ভাবের সময়’। মংলা শহর থেকে ষোল কিলোমিটার দক্ষিণে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ অফিস, চিলা-চাঁদপাই ইউনিয়নের পটভূমিতে গড়ে উঠেছে উপন্যাসটি। নদীর ওপারের দাকোপের লাউডোব-বানিশান্তা ইউনিয়ন, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, চার নম্বর কয়রা - এসেছে ঘটনার সাথে সাথে প্রসঙ্গক্রমে। এসেছে মংলা নদী, শেলা নদী, মৃগমারি খাল, খড়মা খাল, কালামিয়া ভারানি, মরা পশর, আন্ধারিয়া, হরিণটানা, চানমিয়াখালী, সুপতি, কচিখালী, দুবলার চর আরো কতো জায়গা! এ সেই মাটি, যা আমার সারা গায়ে লাগানো, ছাতিলগ্ন দাঁড়ালে এখনও যার গন্ধ পাওয়া যায় আমার শরীরে। 

উপন্যাস পড়তে পড়তে আমার মনে পড়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’র তমিজ আর কুলসুম, নাকি হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’র ‘মেথর বউ’, নাকি মহাশ্বেতা দেবীর ‘অরণ্যের অধিকার’-এর ‘বিরসা মুণ্ডা’কে। মাঝে মাঝে যেন দেখতে পাই শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’র ‘লীলাবতী’কে। এদের কারোরই গন্ধ নেই ‘ঈশানীর ভাবের সময়’ উপন্যাসে। উপন্যাসগুলোর প্রেক্ষিত ভিন্ন, পটভূমি ভিন্ন, ভিন্ন তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও। কিন্তু সব মাটির গন্ধ বোধহয় এক, কারণ তাদের লড়াইগুলো শেষ পর্যন্ত একইরকম। 

উপন্যাসের শুরুতে ঈশানীর পরিচয় পাই না। কিন্তু যখন পাই তখনই মনে হয়, ঈশানী দক্ষিণের এক সবল কালো মেয়ে, যেন দেবী কালীর মতো। যে সামনের বাধা গুড়িয়ে যায় - অদম্য জলস্রোতের মতো। জল কেবল অশ্রুর হয় না, প্লাবনের জলও জল। কিন্তু প্লাবন ছাড়াও জল দৈনিক জোয়ার-ভাটারূপে চলতে থাকে এই দক্ষিণাঞ্চলে। সেই জোয়ারের জল কী প্রবল প্রতাপে মানবের সাধের বেড়িবাঁধ ভেঙে নিয়ে যায়, আংটিহারা গ্রামের মাঝখান থেকে সোজা চিরে দিয়ে তৈরি করে দুটো গ্রাম, সে তো জানা সবার। ঈশানীও তেমনি; এমনিতে কোমল নারীরূপিনী তার বহিরাঙ্গ। কিন্তু জোগার গোনে (জোবা বা জোখাও বলা যায়) জোয়ারের তোড়ে সে সব সামাজিক বাঁধন ছিড়ে চলে যায় আপন গতিতে। 

উপন্যাসের শুরুতেই বাদাবন-সংলগ্ন এক চিরাচরিত গ্রামের রূপ। বাঙলার যে কোনো গ্রামই হতে পারতো, কিন্তু হয়নি। হয়নি তার কারণ, এ গ্রামে অন্য সব গাছপালার সঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেওড়া আর গেওয়া। ধানের ক্ষেতের জলায় শোল-টাকির সাথে বেড়ে ওঠে নোনাট্যাংরা আর মেদিকাঁকড়ার ঝাঁক। রাত বাড়লেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে বাঘের ভয়, লোকে যারে সম্ভ্রমের সঙ্গে ডাকে বড়োমামা বলে। গ্রাম-সংলগ্ন খড়মা খাল পেরিয়ে মাঝে মাঝেই বাঘ গ্রামবাসী আর তাদের গবাদিপশুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে চায়। ওদিকে গ্রামের মানুষও বাঘের আবাসে ঢুকে মাঝে মাঝেই হরিণ মারে, তাতে যুক্ত হয় সরকারের পাহারাদারেরাও। এই তিক্ত সত্যই উপন্যাসের পটভূমির বিশেষত্ব নির্ধারণ করে দেয়। 

বিস্তীর্ণ ধানের ক্ষেত আর তার চারপাশের বর্ণনা দিতে দিতে লেখক আমাদেরকে গ্রামের ভেতরে নিয়ে যান। লেখক যেন দিব্যচোখে দেখতে পান দিগন্ত জুড়ে শুয়ে আছেন নগ্না পৌষলক্ষ্মী দেবী। আর তাঁকে পাহারা দেয় লম্বা নাকের পুরুষ পাহারাদার। জানতে পারি, সে এক লক্ষ্মীপেঁচা। কিন্তু লক্ষ্মীপেঁচা জেনেও প্রশ্ন যায় না। জানতে ইচ্ছে হয়, এই পাহারাদার কি শ্রেফ দেবীর নিরাপত্তা দেয় নাকি সে বাঙলারূপী দেবীর আগ্রাসী পাহারাদার আর্য্যপুরুষ? নাকি দেবীরূপে আছে ঈশানী আর পাহারাদার তার আরাধ্য পুরুষ শাহরিয়ার? 

শুধু পৌষলক্ষ্মী না, পুরো উপন্যাসজুড়ে অলক্ষ্যে কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়েন বনবিবি, দক্ষিণ রায়, বিশালাক্ষী আর প্রচলিত দেবদেবীগণ - ব্রহ্মা, ইন্দ্র, গঙ্গা, কপিল মুণি, সগর রাজা, রাম, ভগীরথ। আর সাথে সাথে আসেন প্রতাপাদিত্য, মোরেল, ইংরেজ আর খ্রিস্টান মিশনারিরা। আজকের বাদা অঞ্চলে লোক-বিশ্বাসের দাপট কমে গেছে। প্রথাগত বিধি আর চর্চার জায়গা দখল করেছে আইন-কানুন, সরকারি আদেশ। কিন্তু প্রথাগত উৎসবগুলো আজও দেখতে পাওয়া যায় খুলনা, সাতক্ষীরা বাগেরহাটের দক্ষিণী গ্রামগুলোতে। সুন্দরবনের পশ্চিম থেকে পুবের দিকে যতো যাওয়া যায় ততোই কমতে থাকবে প্রথাগত বিশ্বাস। বাদার সঙ্গে ঐতিহ্যগত সম্পর্কহীন মানুষেরা বাসা বেঁধেছে প্রধানত পুবে। তাই তো সংস্কারের ধার ধারে না তারা ”

সুন্দরবন সমগ্র


 বইয়ের নাম : সুন্দরবন সমগ্র 
লেখক : শিবশঙ্কর মিত্র 
প্রকাশক : আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা 
প্রথম প্রকাশ : ১৯৮৮ । পৃষ্ঠা : ৪৭২ 
আকার : অক্টাভো । দাম : রুপি ৩০০.০০ 

সুন্দরবনকেন্দ্রিক বাঙলা ইতিহাস শুরু শুরু হয়েছিলো পিতার হাত ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় পুত্র শুরু করলেন সুন্দরবনভিত্তিক সাহিত্য রচনা। ‘সুন্দরবনে আর্জান সর্দার’-এর মতো বিখ্যাত উপন্যাসের সঙ্গে পরপর লিখে গেছেন ‘বেদে বাউলে’, ‘বনবিবি’, ‘সুন্দরবন’ ও ‘রয়্যাল বেঙ্গলের আত্মকথা’র মতো উপন্যাস। পাশাপাশি লিখেছেন ‘সুন্দরবনের ছাটা-বাড়ি লাঠি’, ‘সুন্দরবনের সততা’, ‘আইরাজ’, ‘বনের চোরের উপর শহরের বাটপাড়ি’, ‘বীরঙ্গনা, না সুন্দরবনের মা!’, ‘বিশু বাউলে’, ‘দুগ্যো-সদ্দার’, ‘বাঘের দেখা’, ‘সুন্দরবনে হঠকারিতা’ ও ‘এক যে ছিল সুন্দরবন’-এর মতো অবিস্মরণীয় গল্পসমূহ। ইতিহাসবিদ সতীশ চন্দ্র মিত্রের সুযোগ্য সন্তান শিবশঙ্কর মিত্রের সুন্দরবন সমগ্র বইতে সঙ্কলিত হয়েছে সবগুলো উপন্যাস ও গল্প। তাঁর লেখায় সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের এমন বিবরণ থাকে যে মাইল মেপে গ্রামের নাম বলে দেয়া যায়। বাদাবনপ্রেমিক ও প্রেমিকাদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বই।

Biodiversity of Mangroves

 
বইয়ের নাম : Biodiversity of Mangroves 
লেখক : A.B. Chaudhuri 
প্রকাশক : Daya Publishing House, Delhi 
প্রকাশকাল : 2007 | পৃষ্ঠাসংখ্যা : 332 
আকার : Octavo । মূল্য : INR 1,695.00 

সাধারণত সরকারি কর্মকর্তাদের লেখা বইপত্র হয় খটোমটো সরকারি প্রেসনোটের মতো, অথবা অন্যের লেখার কাট-পেস্ট। বছর দুয়েক আগে ২ হাজার টাকা দিয়ে বন বিভাগের এক ভীষণ কর্মকর্তার লেখা বই কিনে মনে হয়েছিলো এর চেয়ে দুই হাজার টাকার কটকটি কিনে খেলেও লাভ হতো। সৌন্দর্য্যজ্ঞানহীন, হুবহু কপি করা তথ্য দিয়ে ভরা বইটি গত দুই বছরে একবারই খুলে দেখেছি। দ্বিতীয়বার পড়ার রুচি হয়নি। কিন্তু এবি চৌধুরী তেমন নন। তিনি চাকরি করতেন ভারতীয় বন বিভাগের পরিচালক পদে। কিন্তু বন আর পরিবেশকে দেখেছেন অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে, বৈজ্ঞানিক মনীষা মাথায় রেখে। হয়তো বিরল সংগ্রামের ১৯২০’র দশকে জন্মেছেন বলেই এমন হয়েছে। বইটির প্রথম ভাগে এনেছেন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের সঙ্গে বাদাবনের পার্থক্য, সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণী, মানুষ বনাম বন্যপ্রাণীর সংঘর্ষ ও সংরক্ষণের বিষয়গুলো। দ্বিতীয়ভাগে রয়েছে আন্দামান ও নিকোবরের বাদাবনের পরিচিতি, উদ্ভিদ-প্রাণী ও সংরক্ষণের কৌশলসমূহ। বাদাবনের বৈজ্ঞানিক ও ব্যবস্থাপনাগত দিক বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বই এটি।

সুন্দরবন অমনিবাস

 
বইয়ের নাম : সুন্দরবন অমনিবাস 
লেখক : মনোজ বসু 
প্রকাশক : বেঙ্গল পাবলিশার্স লিমিটেড, কলকাতা 
প্রকাশ : ১৯৯৫ । পৃষ্ঠা : ১৬০ 
আকার : অক্টাভো । দাম : রুপি ১০০.০০ 

সুন্দরবন সম্পর্কে জানেন অথচ মনোজ বসুর লেখা পড়েননি, এটা হতেই পারে না। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতোই যশোরের কেশবপুরে জন্ম এ সাহিত্যিকের ভাবনার কেন্দ্রেই ছিলো যশোর-খুলনা-চব্বিশ পরগণার দক্ষিণাঞ্চল তথা সুন্দরবন। সুন্দরবন বিষয়ক তাঁর দুটো উপন্যাস একত্রিত করে প্রকাশ করা হয়েছে ‘সুন্দরবন অমনিবাস’ নামে। এর উপন্যাস দুটো হলো ‘বন কেটে বসতি’ ও ‘জলজঙ্গল’। বাদাবনপ্রেমীদের পাথেয় হোক মনোজ বসুর উপন্যাস।

কহন সুন্দরবন



বইয়ের নাম : কহন সুন্দরবন 
লেখক : গৌতম দাস 
বিষয় : গল্প, সুন্দরবন 
প্রকাশক : পত্রলেখা, কলকাতা 
প্রকাশকাল : ২০১৪ । পৃষ্ঠা : ১৯২ 
মূল্য : রুপি ১৭০ 

গৌতম দাস সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য ও জনঅধিকার নিয়ে কাজ করছেন অনেকদিন ধরেই। তাঁর ১৬টি গল্পের সঙ্কলন এ গ্রন্থ। এসব গল্পের পটভূমি শুধু ভারতীয় সুন্দরবন না, বাংলাদেশের সুন্দরবন নিয়েও আছে তিনটে গল্প। গল্পের মান মোটামুটি। কয়েকটা ভালো গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে অনাকর্ষণীয় গল্পও। পড়ে দেখা যেতে পারে।

রূপসী সুন্দরবন


বইয়ের নাম : রূপসী সুন্দরবন 
লেখক : মোহাম্মদ তোহা খান 
বিষয় : Mangrove Forest, Sundarbans 
প্রকাশক : চারুলিপি প্রকাশন, ঢাকা 
প্রথম প্রকাশ : ১৯৭১ । সবশেষ প্রকাশ : ২০১৫ 
পৃষ্ঠাসজ্জা : Black । আকার : Octavo 
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৬০ । মূল্য : ৩০০ টাকা 

বাংলাদেশ সুন্দরবন নিয়ে যারা প্রথম দিকের লেখালেখি করেন, মোহাম্মদ তোহা খান তার মধ্যে অন্যতম। দৈনিক সংবাদ ও ইত্তেফাকের মতো প্রথম সারির পত্রিকায় কাজের সুবাদে খুঁটিনাটি জেনেছেন অনেক। সশরীরে সুন্দরবনে বহু বছর ঘরে ঘোরাঘুরি, ফটোগ্রাফি, সংবাদ সংগ্রহ আর ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে পড়াশোনা করার পর তাঁর লেখা এ গ্রন্থ। সুন্দরবনের গাজী-কালু-চম্পাবতীর পাশাপাশি বাঘের আক্রমণ, বাঘ শিকার, কেওড়া-গেওয়া-পশুর গাছের সাথে মিশে থাকা সংস্কৃতির নানান উদাহরণ এসেছে বইটিতে। এ কালের পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।